কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত জানুন বিস্তারিত

Mohammad Abulllha Wahed
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত

মানবদেহের সুস্থতা বজায় রাখতে রক্তচাপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই জানেন না, কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত, ফলে তারা নিজের অজান্তেই উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপজনিত ঝুঁকিতে পড়েন। এই আর্টিকেলটিতে আমরা সহজ ভাষায় ও মানবিক অনুভব দিয়ে জানব, কোন বয়সে রক্তচাপ কত হওয়া উচিত এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

রক্তচাপ কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রক্তচাপ হলো সেই বল যা দিয়ে আমাদের হৃৎপিণ্ড রক্তকে ধমনীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। স্বাভাবিক রক্তচাপ না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। রক্তচাপ বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। আবার রক্তচাপ কম হলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে দেরি হয়, ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?

শিশুদের রক্তচাপ সাধারণত ৯০/৬০ mmHg এর আশেপাশে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি হয় প্রায় ১১০/৭০ mmHg। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরা হয় ১২০/৮০ mmHg। ৪০ বছরের উপরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ একটু বাড়তে পারে, তবে ১৩০/৮৫ mmHg এর বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের রক্তচাপ ১৩৫/৮৫ mmHg এর মধ্যে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কী হতে পারে?

উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা, চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা জটিলতা তৈরি করে। অপরদিকে, কম রক্তচাপ হলে হঠাৎ মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। যেমন, একজন ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তি যদি নিয়মিত প্রেসার চেক না করেন এবং সেটা ১৪০/৯৫ থাকে, তিনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়বেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায়

১। লবণ খাওয়া কমান। দিনে ১ চামচের বেশি নয়।

২। পটাশিয়ামযুক্ত ফল খান, যেমন কলা, মাল্টা।

৩। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট।

৪। চিন্তা ও মানসিক চাপ কমান। প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন।

৫। ঘুম যেন পর্যাপ্ত হয়, দিনে অন্তত ৭ ঘণ্টা।

৬। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিন এবং কখনও ওষুধ বন্ধ করবেন না।

কোন লক্ষণগুলো দেখলে রক্তচাপ চেক করানো দরকার?

• মাথা ঘোরা বা ভার লাগা।

• চোখে ঝাপসা দেখা।

• হঠাৎ দুর্বল লাগা।

• বুক ধড়ফড় করা।

• শরীর ভারী লাগা।

যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত প্রেসার মাপানো উচিত।

ঘরোয়া উপায়ে প্রেশার মাপার নিয়ম

ডিজিটাল BP মেশিন দিয়ে খুব সহজেই ঘরে বসে রক্তচাপ মাপা যায়। মাপার আগে ৫ মিনিট বসে বিশ্রাম নিন। হাতটি বুকের সমান উচ্চতায় রেখে মেশিনের কাপ পরান। দু’বার মাপলে একটি গড় মান ধরুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার মাপার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ কবে নিতে হবে?

৪০ বছর বয়স পার হলে রুটিন চেকআপ করা জরুরি।যাদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস আছে, তাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী নারীদের জন্যও রক্তচাপ নিয়মিত চেক করা অত্যন্ত জরুরি।

কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত বিষয়টি জানা মানেই সতর্ক থাকা

স্বাস্থ্যই সম্পদ। বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত হওয়া উচিত তা জানা, বুঝে চলা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা আমাদের সুস্থ জীবনের পথ খুলে দেয়। নিজে সচেতন হোন, পরিবারকে সচেতন করুন। আজই একটি BP মেশিন কিনুন, আর প্রেসার নিয়মিত চেক করুন। আল্লাহ হাফেজ।

গ্যাসের ব্যথা ও হার্টের ব্যথার পার্থক্য। বিস্তারিত জানতে এখানে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত জানুন বিস্তারিত

আপডেট সময় : ০৪:৫২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

মানবদেহের সুস্থতা বজায় রাখতে রক্তচাপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই জানেন না, কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত, ফলে তারা নিজের অজান্তেই উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপজনিত ঝুঁকিতে পড়েন। এই আর্টিকেলটিতে আমরা সহজ ভাষায় ও মানবিক অনুভব দিয়ে জানব, কোন বয়সে রক্তচাপ কত হওয়া উচিত এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

রক্তচাপ কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রক্তচাপ হলো সেই বল যা দিয়ে আমাদের হৃৎপিণ্ড রক্তকে ধমনীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। স্বাভাবিক রক্তচাপ না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। রক্তচাপ বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। আবার রক্তচাপ কম হলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে দেরি হয়, ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?

শিশুদের রক্তচাপ সাধারণত ৯০/৬০ mmHg এর আশেপাশে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি হয় প্রায় ১১০/৭০ mmHg। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরা হয় ১২০/৮০ mmHg। ৪০ বছরের উপরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ একটু বাড়তে পারে, তবে ১৩০/৮৫ mmHg এর বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের রক্তচাপ ১৩৫/৮৫ mmHg এর মধ্যে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কী হতে পারে?

উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা, চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা জটিলতা তৈরি করে। অপরদিকে, কম রক্তচাপ হলে হঠাৎ মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। যেমন, একজন ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তি যদি নিয়মিত প্রেসার চেক না করেন এবং সেটা ১৪০/৯৫ থাকে, তিনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়বেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায়

১। লবণ খাওয়া কমান। দিনে ১ চামচের বেশি নয়।

২। পটাশিয়ামযুক্ত ফল খান, যেমন কলা, মাল্টা।

৩। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট।

৪। চিন্তা ও মানসিক চাপ কমান। প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন।

৫। ঘুম যেন পর্যাপ্ত হয়, দিনে অন্তত ৭ ঘণ্টা।

৬। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিন এবং কখনও ওষুধ বন্ধ করবেন না।

কোন লক্ষণগুলো দেখলে রক্তচাপ চেক করানো দরকার?

• মাথা ঘোরা বা ভার লাগা।

• চোখে ঝাপসা দেখা।

• হঠাৎ দুর্বল লাগা।

• বুক ধড়ফড় করা।

• শরীর ভারী লাগা।

যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত প্রেসার মাপানো উচিত।

ঘরোয়া উপায়ে প্রেশার মাপার নিয়ম

ডিজিটাল BP মেশিন দিয়ে খুব সহজেই ঘরে বসে রক্তচাপ মাপা যায়। মাপার আগে ৫ মিনিট বসে বিশ্রাম নিন। হাতটি বুকের সমান উচ্চতায় রেখে মেশিনের কাপ পরান। দু’বার মাপলে একটি গড় মান ধরুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার মাপার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ কবে নিতে হবে?

৪০ বছর বয়স পার হলে রুটিন চেকআপ করা জরুরি।যাদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস আছে, তাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী নারীদের জন্যও রক্তচাপ নিয়মিত চেক করা অত্যন্ত জরুরি।

কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত বিষয়টি জানা মানেই সতর্ক থাকা

স্বাস্থ্যই সম্পদ। বয়স অনুযায়ী রক্তচাপ কত হওয়া উচিত তা জানা, বুঝে চলা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা আমাদের সুস্থ জীবনের পথ খুলে দেয়। নিজে সচেতন হোন, পরিবারকে সচেতন করুন। আজই একটি BP মেশিন কিনুন, আর প্রেসার নিয়মিত চেক করুন। আল্লাহ হাফেজ।

গ্যাসের ব্যথা ও হার্টের ব্যথার পার্থক্য। বিস্তারিত জানতে এখানে যান।