ঢাকা ০১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা ২০২৫ প্রকাশিত হল

Mohammad Abulllha Wahed
  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ২২৮ বার পড়া হয়েছে

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা  নিয়ে বহুদিন ধরেই চলছে আলোচনা, দাবি ও আন্দোলন। শিক্ষকরা মনে করেন, সরকারি শিক্ষকদের মতো টাইম স্কেল না থাকায় তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন।এই নীতিমালা শুধু একটি আর্থিক সুবিধা নয়, এটি একজন শিক্ষকের প্রাপ্য সম্মান এবং কর্মজীবনের স্বীকৃতির প্রতীক।

টাইম স্কেল কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

টাইম স্কেল মানে হলো নির্দিষ্ট সময় পর শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির সুযোগ। সরকারি শিক্ষকরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর টাইম স্কেল পান, ফলে তাদের আর্থিক উন্নতি হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন একই স্কেলে থেকে যান।উদাহরণস্বরূপ, একজন বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ২০ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন, যেখানে তার সরকারি সমমানের সহকর্মী ৩ বার ইনক্রিমেন্ট পেয়েছেন।

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালার বর্তমান চিত্র

বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা টাইম স্কেলের সুবিধা পাচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু সময় পরপর আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। শিক্ষক ফেডারেশন বারবার স্মারকলিপি দিচ্ছে, কর্মসূচি ঘোষণা করছে, কিন্তু ফলাফল নেই।

টাইম স্কেল না পাওয়ার ফলে শিক্ষকদের সমস্যা

বেতন বাড়ে না, অথচ খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে টিউশনি কিংবা পার্ট-টাইম কাজ করতে হয়। এতে শিক্ষকতার প্রতি মনোযোগ কমে যায়, ক্লাসে প্রভাব পড়ে। শিক্ষার্থীদের উপরও এর প্রভাব পড়ে।

টাইম স্কেল বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ

সরকার বলছে, নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। কিছু শিক্ষা কর্মকর্তা টাইম স্কেল বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে এখনো নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা হয়নি। শিক্ষক নেতারা বলছেন, শুধু আশ্বাস নয়, লিখিত নির্দেশনা চাই।

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি: টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট

বেসরকারি শিক্ষকরা চান সরকারি শিক্ষকদের মতো টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট। তাদের দাবি, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষা সেবাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক বেতন বৈষম্য একটি বড় সামাজিক সমস্যা

একই কাজ করেও বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি সহকর্মীদের চেয়ে অনেক কম বেতন পান। এটি শুধু অন্যায় নয়, এটি একজন শিক্ষকের মর্যাদাকে খাটো করে। এই বৈষম্য দূর না হলে, নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

সমাধান কী হতে পারে?

• প্রথমত, একটি বাস্তবভিত্তিক টাইম স্কেল নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

• দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট সুনির্দিষ্ট নিয়মে দিতে হবে।

• তৃতীয়ত, শিক্ষা বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।

• চতুর্থত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তদারকি থাকতে হবে যেন নীতিমালা বাস্তবায়নে অনিয়ম না হয়।

শিক্ষকের ন্যায্যতা মানে দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা বাস্তবায়ন কেবল একটি দাবি নয়, এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার টিকে থাকার শর্ত। যে শিক্ষক নিজের পরিবারের জন্য ন্যায্য আয় পান না, তিনি কীভাবে প্রজন্ম গড়বেন? আসুন, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করি। একটি কার্যকর টাইম স্কেল নীতিমালা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা ২০২৫ প্রকাশিত হল

আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা  নিয়ে বহুদিন ধরেই চলছে আলোচনা, দাবি ও আন্দোলন। শিক্ষকরা মনে করেন, সরকারি শিক্ষকদের মতো টাইম স্কেল না থাকায় তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন।এই নীতিমালা শুধু একটি আর্থিক সুবিধা নয়, এটি একজন শিক্ষকের প্রাপ্য সম্মান এবং কর্মজীবনের স্বীকৃতির প্রতীক।

টাইম স্কেল কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

টাইম স্কেল মানে হলো নির্দিষ্ট সময় পর শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির সুযোগ। সরকারি শিক্ষকরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর টাইম স্কেল পান, ফলে তাদের আর্থিক উন্নতি হয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন একই স্কেলে থেকে যান।উদাহরণস্বরূপ, একজন বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ২০ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন, যেখানে তার সরকারি সমমানের সহকর্মী ৩ বার ইনক্রিমেন্ট পেয়েছেন।

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালার বর্তমান চিত্র

বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা টাইম স্কেলের সুবিধা পাচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু সময় পরপর আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। শিক্ষক ফেডারেশন বারবার স্মারকলিপি দিচ্ছে, কর্মসূচি ঘোষণা করছে, কিন্তু ফলাফল নেই।

টাইম স্কেল না পাওয়ার ফলে শিক্ষকদের সমস্যা

বেতন বাড়ে না, অথচ খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে টিউশনি কিংবা পার্ট-টাইম কাজ করতে হয়। এতে শিক্ষকতার প্রতি মনোযোগ কমে যায়, ক্লাসে প্রভাব পড়ে। শিক্ষার্থীদের উপরও এর প্রভাব পড়ে।

টাইম স্কেল বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ

সরকার বলছে, নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। কিছু শিক্ষা কর্মকর্তা টাইম স্কেল বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে এখনো নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা হয়নি। শিক্ষক নেতারা বলছেন, শুধু আশ্বাস নয়, লিখিত নির্দেশনা চাই।

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি: টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট

বেসরকারি শিক্ষকরা চান সরকারি শিক্ষকদের মতো টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট। তাদের দাবি, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষা সেবাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক বেতন বৈষম্য একটি বড় সামাজিক সমস্যা

একই কাজ করেও বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি সহকর্মীদের চেয়ে অনেক কম বেতন পান। এটি শুধু অন্যায় নয়, এটি একজন শিক্ষকের মর্যাদাকে খাটো করে। এই বৈষম্য দূর না হলে, নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

সমাধান কী হতে পারে?

• প্রথমত, একটি বাস্তবভিত্তিক টাইম স্কেল নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

• দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট সুনির্দিষ্ট নিয়মে দিতে হবে।

• তৃতীয়ত, শিক্ষা বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।

• চতুর্থত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তদারকি থাকতে হবে যেন নীতিমালা বাস্তবায়নে অনিয়ম না হয়।

শিক্ষকের ন্যায্যতা মানে দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল নীতিমালা বাস্তবায়ন কেবল একটি দাবি নয়, এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার টিকে থাকার শর্ত। যে শিক্ষক নিজের পরিবারের জন্য ন্যায্য আয় পান না, তিনি কীভাবে প্রজন্ম গড়বেন? আসুন, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করি। একটি কার্যকর টাইম স্কেল নীতিমালা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই।