অবশেষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি মায়ানমার সরকার, প্রথম ধাপে নিবে ১ লক্ষ ৮০ হাজার জনকে

- আপডেট সময় : ০৭:১২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫ ৮০ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি মায়ানমার সরকার, প্রথম ধাপে নিবে ১ লক্ষ ৮০ হাজার জনকে। এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশার আলো জাগাচ্ছে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি কতটা বাস্তবসম্মত এবং নিরাপদ হবে, তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
মায়ানমার সরকারের সিদ্ধান্তের পটভূমি
মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে গড়িমসি করছিল। আন্তর্জাতিক চাপ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবাদ এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ডাঃ ইউনুসের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে অবশেষে মিয়ানমার সরকার রাজি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ এ বিষয়ে মিয়ানমারকে অনেকবার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে, চীন এবং আসিয়ান (ASEAN) দেশগুলোর মধ্যস্থতায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে এসেছে।
প্রথম ধাপে ১ লক্ষ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া
মিয়ানমার সরকার প্রথম ধাপে ১ লক্ষ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম দফায় যারা ফিরবেন, তাদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রা খুবই কঠিন। কক্সবাজার এবং ভাসানচরের শরণার্থী শিবিরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের অভাব তাদের দৈনন্দিন জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে আনছে। এর ফলে অনেকে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে।
কিভাবে ফেরত পাঠানো হবে?
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি হবে ধাপে ধাপে। জাতিসংঘ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই করা হবে। ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কাজ করবে। তবে, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পর তারা যথাযথ নাগরিক অধিকার পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
মায়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমার সরকারের এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, শুধুমাত্র ফিরিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাও জরুরি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ চায় দ্রুত এই প্রত্যাবাসন কার্যকর করতে, যাতে দেশের উপর থেকে শরণার্থীদের চাপ কিছুটা কমে। চীন, ভারত এবং আসিয়ান দেশগুলো এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবং সহায়তা করতে আগ্রহী।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সমাধান
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য শুধু প্রত্যাবাসনই যথেষ্ট নয়। মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই প্রক্রিয়াটি যাতে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই হয়, তা নিশ্চিত করা। রোহিঙ্গারা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে একই সংকট আবারও দেখা দিতে পারে।
অবশেষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি মায়ানমার সরকার, যা দীর্ঘদিনের সংকট সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, এই প্রত্যাবাসন সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার উপর। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার আশা করে, এই প্রক্রিয়া সফল হলে দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের জন্যই এটি লাভজনক হবে।
কিরগিজস্তান ভিসা ফর বাংলাদেশী ২০২৫। বিস্তারিত জানতে এখানে যান।