বাংলাদেশ সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকায় জ্বালানি তেল ক্রয় পরিকল্পনা

- আপডেট সময় : ১১:১৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫ ৩১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকায় জ্বালানি তেল ক্রয় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে ক্রমবর্ধমান তেলের দামের মধ্যেও সরকারের এই আগাম উদ্যোগ আলোচনায় এসেছে।
পরিকল্পনার বিস্তারিত ও মূল উদ্দেশ্য
বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) এর মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এই তেল বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন ও শিল্পখাতে ব্যবহৃত হবে। সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে।চুক্তি অনুযায়ী, এই তেল ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত দেশের মজুতের অংশ হিসেবে থাকবে।
বিপিসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা
বিপিসি ইতিমধ্যে তেলের মজুত পরিকল্পনা এবং বিতরণ চেইনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ৯ হাজার কোটি টাকার অর্থ ছাড়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছে এবং এই অর্থ ধাপে ধাপে ব্যয় করা হবে। এটি দেশের বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তবে সরকার এটিকে পরিচালনা করবে ধীরে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে।
বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার ও বাংলাদেশের প্রভাব
বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা এতে বড় ভূমিকা রাখছে। এই পরিস্থিতিতে আগাম তেল কেনার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদী লাভ এনে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিল।
সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকায় জ্বালানি তেল ক্রয় পরিকল্পনা: সুফল ও ঝুঁকি
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা সহজ হবে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি নির্ভরতা আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নেওয়া হয়েছে তবে তেলের ব্যবহারে দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
জ্বালানি তেলের দাম ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
দেশের সাধারণ জনগণ আশা করছে তেল মজুত থাকলে বিদ্যুৎচাহিদা মেটানো সহজ হবে। এতে করে লোডশেডিং কমবে এবং যানবাহনের ব্যয়ও নিয়ন্ত্রিত রাখা যাবে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, “বিদ্যুৎ থাকলে আমার ফ্রিজ, ফ্যান, লাইট সব চালাতে পারি—বিক্রিও বাড়ে।”
ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিকল্প কৌশল
শুধু তেল আমদানিতে নির্ভর না করে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। যেমন, সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তির মতো টেকসই উপায় নিয়েও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ ইতোমধ্যে তেলের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছে।
উপসংহার ও পরামর্শ
সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকায় জ্বালানি তেল ক্রয় পরিকল্পনা বর্তমান বাস্তবতায় একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে এই তেল যেন যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়, অপচয় না হয়, এবং জনসাধারণের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ না পড়ে—এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য স্বচ্ছতা, বিকল্প শক্তির উদ্যোগ এবং কার্যকর জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই পরিকল্পনার সফলতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
রেফারেন্স: