স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকা | High Protein Food List

Mohammad Abulllha Wahed
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকা

আমাদের দেহের পেশিগুলোর বিকাশ ও শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা থাকা উচিত। এতে করে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের পেটের চর্বিও হ্রাস পায়। আবার প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এমন ধরনের খাবার ডায়েটের অত্যাচার কমাতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং অন্যান্য শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।একজন পুরুষের দের জন্য দৈনিক ৫৬ গ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ৪৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ফিটনেস স্পেশালিস্ট মনে করেন যে সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চাইতে বেশি পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন।

উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকা ২০২৫

আজকে আমি আপনাদের সামনে এমন কিছু খাদ্য সম্পর্কে উপস্থাপন করব যেগুলো আমাদের আশেপাশের খুব সহজে পাওয়া যায় এবং এতে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন।

হাঁস মুরগির ডিম

পুষ্টিকর খাবার গুলোর তালিকা অন্যতম হচ্ছে হাঁস এবং মুরগির ডিম। এই খাদ্য উপাদানটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর চর্বি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। আমরা জানি একটি ডিমের দুটি অংশ থাকে যার মধ্যে একটি হচ্ছে সাদা এবং অপরটি হচ্ছে হলুদ অংশ যেটাকে আমরা কুসুম বলে থাকি। এটি প্রোটিনের ভালো একটি উৎসব। একটি সম্পূর্ণ ডিমের মধ্যেও প্রায় ৩৩% ক্যালরি থাকে। ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৭৮ ক্যালোরি শক্তি রয়েছে।

জনপ্রিয় খাবার কাজুবাদাম

এটাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম সহ নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। তবে এই ধরনের খাবারে অনেকেরই এলার্জি থাকতে পারে। একটি কাজুবাদামে থাকে ১৫% ক্যালরি। আপনি যদি এক ১ আউন্স বা ২৮ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৬৪ ক্যালোরি শক্তি।

প্রণিজ উৎস থেকে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার

চিকেন বা মুরগির মাংস

আমাদের দেশের জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম। বিয়ে বাড়ির শহর নানা ধরনের অনুষ্ঠানে মুরগি ছাড়া একদমই চলে না। এটি দ্বারা বহুমুখী রেসিপি তৈরি করা যায় এমনকি খেতেও অনেক সুস্বাদু। মুরগির মাংস তে সাধারণত ৭৫% ক্যালরি থাকে।

ওটস

এটিও স্বাস্থ্যকর খাবার গুলোর মধ্যে একটি। এতে রয়েছে থিয়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। সাধারণত এক কাপ ওটসে ১১ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩৬ ক্যালরি শক্তি থাকে।

পনির

যারা কিনা টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই পনির সম্পর্কে বেশ ধারণা রয়েছে। এই কার্টুনে জেরি সবসময়ই পনির চুরি করতে চায়। স্বাস্থ্যকর এই খাবারটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি ১২, সেলোনিয়াম ও অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। পনিরে রয়েছে ৬৯% ক্যালোরি। সেই সাথে অন্যান্য ভিটামিন উপাদানা রয়েছে। তবে যারা কিনা ডায়েট করছেন কিংবা ফ্যাট এড়িয়ে চলতে চান তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া উচিত।

গ্রীক দই বা উচ্চ ঘন দই

উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকায় রয়েছে দই। সাধারণত ঘন দই কে বলা হয় স্ট্রেইন বা গ্রীক দই। বাঙ্গালীদের মজাদার খাবারের তালিকায়ও এটি অন্যতম। বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান যেন দই মিষ্টি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সাধারণত ৬ আউন্স বা ১০৭ গ্রাম দইয়ে থাকে ১৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০০ ক্যালোরি শক্তি। তবে কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন সেটা যেন চিনি মুক্ত হয়। কারণ চিনির কারণে ওজন বাড়তে পারে।

আদর্শ খাবার দুধ

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচাইতে আদর্শ খাবার হচ্ছে দুধ। একই দিকে এটি প্রোটিনের ভালো উৎস কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন। তবে আপনি যদি চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণে অনীহা থাকে তাহলে জিরো ফ্যাট দুধ কিনতে পারেন। তবে ল্যাপটপ জাতীয় খাবার হওয়ায় অনেকের পেটের সমস্যা হতে পারে। এমনকি এলার্জিও থাকতে পারে। সাধারণত একটি ৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৫৯ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

ব্রুকলি সবুজ সবজি

আমরা ফুলকপি খেয়ে অভ্যস্ত। ব্রুকলি সবজিটি দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতই কিন্তু রং হচ্ছে গারো সবুজ। ভিটামিন কে, সি, ফাইবার এবং পটাশিয়াম। এমনকি এর বায়ো একটিভ উপাদান গুলি আমাদেরকে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে। সাধারণত ১ কাপ বা ৯৬ গ্রাম প্রকৃত রয়েছে ৩ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩১ ক্যালরি।

আমিষ বা মাংস

অনেকেই শুধু শাকসবজি পছন্দ করেন আবার অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মাংস। যুক্ত খাবার তালিকার মধ্যে এটি অন্যতম। আমাদের দেহের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম পাতলা মাংস খেলে আমরা ২৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৮৬ ক্যালোরি শক্তি পেয়ে থাকে।

স্যালমন বা টুনা ফিশ

এটিও জনপ্রিয় খাবার। যারা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়েছেন কিন্তু টুনা ফিশ খাননি তারা অনেক বড় কিছু মিস করেছেন। সারা বিশ্ব জুড়েই এটি সরবরাহ করা হয়। ১৪২ গ্রাম টুনাফিসের মধ্যে ২৭ গ্রাম পর্যন্ত থাকে এবং ১২৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

উদ্ভিজ্জ উৎস উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার

উপরের তালিকায় যে খাবার গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা আপনি আশেপাশ থেকেই কিনতে পারবেন। এছাড়াও আরো কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। যেমন মসুর ডাল। এটিকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ গোস্তে যে পরিমাণ কঠিন থাকে তাহলেও ঠিক একই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। সাধারণত এক কাপ বা ১৫৮ গ্রাম সিদ্ধ মসুর ডালে প্রোটিন পাওয়া যায় ১৮ গ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় ২৩০। আমাদের দেশীয় সবজি গুলোর মধ্যেও কুমড়োর বীজেও রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং দস্তা। এটি নিয়মিত গ্রহণেও শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হতে পারে। তাছাড়া চিংড়ি, চিনা বাদাম, মাছ, টার্কির মাংস, রুটি ইত্যাদি খেলেও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।

কোন খাবারে কত প্রোটিন থাকে তার একটি চার্ট দেওয়া হলো

নিচে কিছু সাধারণ খাবারের প্রোটিন পরিমাণসহ একটি সহজ চার্ট দেওয়া হলো, যা প্রতিটি খাবারের প্রতি ১০০ গ্রাম বিদ্যামান প্রোটিনের পরিমাণ নির্দেশ করে।

• মুরগির মাংস (সিদ্ধ) ৩১ গ্রাম।

• ডিম (সম্পূর্ণ) ১৩ গ্রাম।

• মাছ (রুই, ইলিশ, তেলাপিয়া) ২০–২৫ গ্রাম।

• ছোলা (সিদ্ধ) ৮.৯ গ্রাম।

• সয়াবিন (সিদ্ধ) ১৬.৬ গ্রাম।

• বাদাম (পিনাট) ২৫–২৬ গ্রাম।

• ছানার ঘি (পনির) ১৮–২১ গ্রাম।

• চাল (সিদ্ধ) ২.৫–২.৭ গ্রাম।

• ডিমের সাদা অংশ ১১ গ্রাম।

প্রোটিন জাতীয় ফলের নাম

খেজুর – খেজুরে তুলনামূলক বেশি প্রোটিন থাকে, প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৫ গ্রাম।

আভোকাডো – এই ফলে প্রায় ২ গ্রাম প্রোটিন থাকে এবং এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটেও সমৃদ্ধ।

নারকেল (শুকনো) – শুকনো নারকেলে প্রায় ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কলা – প্রতিটি কলায় গড়ে প্রায় ১.১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

আম – পাকা আমে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ০.৮ গ্রাম।

স্ট্রবেরি – প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ০.৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কম প্রোটিন যুক্ত খাবারের তালিকা

কম প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো সাধারণত শর্করা ও চর্বি নির্ভর হয় এবং প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। যেমন—চাল, আলু, ট্যাপিওকা (শিমুল আলু), চিনি, মিষ্টি, তেল, ঘি, সফট ড্রিংক, জ্যাম-জেলি, বিভিন্ন ফাস্টফুড ও ময়দা জাতীয় খাবার (পাউরুটি, বিস্কুট)। এগুলোতে প্রোটিনের পরিমাণ অল্প হলেও ক্যালোরি বেশি থাকে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ বা রোগী বিশেষ খাদ্যতালিকায় এগুলো সীমিত রাখতে হয়।

উচ্চ প্রোটিন ডায়েট কাদের জন্য উপযোগী

একজন পূর্ণবয়স্ক এবং স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিনে গ্রহণ করা উচিত। তবে যারা কিনা জিম করেন, খেলাধুলা করেন কিংবা ডায়েট করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি কম বা বেশি হতে পারে। তবে বডিবিল্ডিং খেলাধুলা এবং অ্যাথলেটের জন্য প্রোটনের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। এমনকি শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি কঠিন দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

বেশি বেশি প্রোটিন খাবার ঝুঁকি

কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। প্রোটিনের বেলায় ও তার। অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করার ফলে কিডনির উপর প্রভাব পড়তে পারে। আবার যাদেরকে না হার্ট সহ নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই বেশি বেশি প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত নয়।

অন্যান্য সতর্কতা

আপনি সুস্থ স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন যতটুকু পরিমাণ আমাদের গ্রহণ করা উচিত। আর এই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার তালিকা অবশ্যই জেনে রাখা ভালো। কারণ সুষম খাবার গ্রহণ করতে গেলে প্রোটিন কখনো এটা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকা | High Protein Food List

আপডেট সময় : ০৭:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

আমাদের দেহের পেশিগুলোর বিকাশ ও শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা থাকা উচিত। এতে করে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের পেটের চর্বিও হ্রাস পায়। আবার প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এমন ধরনের খাবার ডায়েটের অত্যাচার কমাতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং অন্যান্য শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।একজন পুরুষের দের জন্য দৈনিক ৫৬ গ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ৪৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ফিটনেস স্পেশালিস্ট মনে করেন যে সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চাইতে বেশি পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন।

উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকা ২০২৫

আজকে আমি আপনাদের সামনে এমন কিছু খাদ্য সম্পর্কে উপস্থাপন করব যেগুলো আমাদের আশেপাশের খুব সহজে পাওয়া যায় এবং এতে রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন।

হাঁস মুরগির ডিম

পুষ্টিকর খাবার গুলোর তালিকা অন্যতম হচ্ছে হাঁস এবং মুরগির ডিম। এই খাদ্য উপাদানটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর চর্বি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। আমরা জানি একটি ডিমের দুটি অংশ থাকে যার মধ্যে একটি হচ্ছে সাদা এবং অপরটি হচ্ছে হলুদ অংশ যেটাকে আমরা কুসুম বলে থাকি। এটি প্রোটিনের ভালো একটি উৎসব। একটি সম্পূর্ণ ডিমের মধ্যেও প্রায় ৩৩% ক্যালরি থাকে। ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৭৮ ক্যালোরি শক্তি রয়েছে।

জনপ্রিয় খাবার কাজুবাদাম

এটাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম সহ নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। তবে এই ধরনের খাবারে অনেকেরই এলার্জি থাকতে পারে। একটি কাজুবাদামে থাকে ১৫% ক্যালরি। আপনি যদি এক ১ আউন্স বা ২৮ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৬৪ ক্যালোরি শক্তি।

প্রণিজ উৎস থেকে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার

চিকেন বা মুরগির মাংস

আমাদের দেশের জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম। বিয়ে বাড়ির শহর নানা ধরনের অনুষ্ঠানে মুরগি ছাড়া একদমই চলে না। এটি দ্বারা বহুমুখী রেসিপি তৈরি করা যায় এমনকি খেতেও অনেক সুস্বাদু। মুরগির মাংস তে সাধারণত ৭৫% ক্যালরি থাকে।

ওটস

এটিও স্বাস্থ্যকর খাবার গুলোর মধ্যে একটি। এতে রয়েছে থিয়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। সাধারণত এক কাপ ওটসে ১১ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩৬ ক্যালরি শক্তি থাকে।

পনির

যারা কিনা টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই পনির সম্পর্কে বেশ ধারণা রয়েছে। এই কার্টুনে জেরি সবসময়ই পনির চুরি করতে চায়। স্বাস্থ্যকর এই খাবারটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি ১২, সেলোনিয়াম ও অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। পনিরে রয়েছে ৬৯% ক্যালোরি। সেই সাথে অন্যান্য ভিটামিন উপাদানা রয়েছে। তবে যারা কিনা ডায়েট করছেন কিংবা ফ্যাট এড়িয়ে চলতে চান তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া উচিত।

গ্রীক দই বা উচ্চ ঘন দই

উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার তালিকায় রয়েছে দই। সাধারণত ঘন দই কে বলা হয় স্ট্রেইন বা গ্রীক দই। বাঙ্গালীদের মজাদার খাবারের তালিকায়ও এটি অন্যতম। বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান যেন দই মিষ্টি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সাধারণত ৬ আউন্স বা ১০৭ গ্রাম দইয়ে থাকে ১৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০০ ক্যালোরি শক্তি। তবে কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন সেটা যেন চিনি মুক্ত হয়। কারণ চিনির কারণে ওজন বাড়তে পারে।

আদর্শ খাবার দুধ

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচাইতে আদর্শ খাবার হচ্ছে দুধ। একই দিকে এটি প্রোটিনের ভালো উৎস কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন। তবে আপনি যদি চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণে অনীহা থাকে তাহলে জিরো ফ্যাট দুধ কিনতে পারেন। তবে ল্যাপটপ জাতীয় খাবার হওয়ায় অনেকের পেটের সমস্যা হতে পারে। এমনকি এলার্জিও থাকতে পারে। সাধারণত একটি ৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৫৯ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

ব্রুকলি সবুজ সবজি

আমরা ফুলকপি খেয়ে অভ্যস্ত। ব্রুকলি সবজিটি দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতই কিন্তু রং হচ্ছে গারো সবুজ। ভিটামিন কে, সি, ফাইবার এবং পটাশিয়াম। এমনকি এর বায়ো একটিভ উপাদান গুলি আমাদেরকে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে। সাধারণত ১ কাপ বা ৯৬ গ্রাম প্রকৃত রয়েছে ৩ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩১ ক্যালরি।

আমিষ বা মাংস

অনেকেই শুধু শাকসবজি পছন্দ করেন আবার অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মাংস। যুক্ত খাবার তালিকার মধ্যে এটি অন্যতম। আমাদের দেহের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম পাতলা মাংস খেলে আমরা ২৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৮৬ ক্যালোরি শক্তি পেয়ে থাকে।

স্যালমন বা টুনা ফিশ

এটিও জনপ্রিয় খাবার। যারা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়েছেন কিন্তু টুনা ফিশ খাননি তারা অনেক বড় কিছু মিস করেছেন। সারা বিশ্ব জুড়েই এটি সরবরাহ করা হয়। ১৪২ গ্রাম টুনাফিসের মধ্যে ২৭ গ্রাম পর্যন্ত থাকে এবং ১২৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে।

উদ্ভিজ্জ উৎস উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার

উপরের তালিকায় যে খাবার গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা আপনি আশেপাশ থেকেই কিনতে পারবেন। এছাড়াও আরো কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। যেমন মসুর ডাল। এটিকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ গোস্তে যে পরিমাণ কঠিন থাকে তাহলেও ঠিক একই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। সাধারণত এক কাপ বা ১৫৮ গ্রাম সিদ্ধ মসুর ডালে প্রোটিন পাওয়া যায় ১৮ গ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় ২৩০। আমাদের দেশীয় সবজি গুলোর মধ্যেও কুমড়োর বীজেও রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং দস্তা। এটি নিয়মিত গ্রহণেও শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হতে পারে। তাছাড়া চিংড়ি, চিনা বাদাম, মাছ, টার্কির মাংস, রুটি ইত্যাদি খেলেও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।

কোন খাবারে কত প্রোটিন থাকে তার একটি চার্ট দেওয়া হলো

নিচে কিছু সাধারণ খাবারের প্রোটিন পরিমাণসহ একটি সহজ চার্ট দেওয়া হলো, যা প্রতিটি খাবারের প্রতি ১০০ গ্রাম বিদ্যামান প্রোটিনের পরিমাণ নির্দেশ করে।

• মুরগির মাংস (সিদ্ধ) ৩১ গ্রাম।

• ডিম (সম্পূর্ণ) ১৩ গ্রাম।

• মাছ (রুই, ইলিশ, তেলাপিয়া) ২০–২৫ গ্রাম।

• ছোলা (সিদ্ধ) ৮.৯ গ্রাম।

• সয়াবিন (সিদ্ধ) ১৬.৬ গ্রাম।

• বাদাম (পিনাট) ২৫–২৬ গ্রাম।

• ছানার ঘি (পনির) ১৮–২১ গ্রাম।

• চাল (সিদ্ধ) ২.৫–২.৭ গ্রাম।

• ডিমের সাদা অংশ ১১ গ্রাম।

প্রোটিন জাতীয় ফলের নাম

খেজুর – খেজুরে তুলনামূলক বেশি প্রোটিন থাকে, প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৫ গ্রাম।

আভোকাডো – এই ফলে প্রায় ২ গ্রাম প্রোটিন থাকে এবং এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটেও সমৃদ্ধ।

নারকেল (শুকনো) – শুকনো নারকেলে প্রায় ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কলা – প্রতিটি কলায় গড়ে প্রায় ১.১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

আম – পাকা আমে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ০.৮ গ্রাম।

স্ট্রবেরি – প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ০.৮ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কম প্রোটিন যুক্ত খাবারের তালিকা

কম প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো সাধারণত শর্করা ও চর্বি নির্ভর হয় এবং প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। যেমন—চাল, আলু, ট্যাপিওকা (শিমুল আলু), চিনি, মিষ্টি, তেল, ঘি, সফট ড্রিংক, জ্যাম-জেলি, বিভিন্ন ফাস্টফুড ও ময়দা জাতীয় খাবার (পাউরুটি, বিস্কুট)। এগুলোতে প্রোটিনের পরিমাণ অল্প হলেও ক্যালোরি বেশি থাকে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ বা রোগী বিশেষ খাদ্যতালিকায় এগুলো সীমিত রাখতে হয়।

উচ্চ প্রোটিন ডায়েট কাদের জন্য উপযোগী

একজন পূর্ণবয়স্ক এবং স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিনে গ্রহণ করা উচিত। তবে যারা কিনা জিম করেন, খেলাধুলা করেন কিংবা ডায়েট করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি কম বা বেশি হতে পারে। তবে বডিবিল্ডিং খেলাধুলা এবং অ্যাথলেটের জন্য প্রোটনের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। এমনকি শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি কঠিন দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

বেশি বেশি প্রোটিন খাবার ঝুঁকি

কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। প্রোটিনের বেলায় ও তার। অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করার ফলে কিডনির উপর প্রভাব পড়তে পারে। আবার যাদেরকে না হার্ট সহ নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই বেশি বেশি প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত নয়।

অন্যান্য সতর্কতা

আপনি সুস্থ স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন যতটুকু পরিমাণ আমাদের গ্রহণ করা উচিত। আর এই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার তালিকা অবশ্যই জেনে রাখা ভালো। কারণ সুষম খাবার গ্রহণ করতে গেলে প্রোটিন কখনো এটা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।